শেয়ার বাজার

উদ্বোধন হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

উদ্বোধন হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

JlecBD ডেস্ক: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) পর্দা উঠলো। রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে মাসব্যাপী এ মেলার ২৮তম আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রপ্তানি বাণিজ্য উন্নয়নের অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে পণ্য উন্নয়ন ও পণ্যের বহুমুখী বাজার সৃষ্টিকরণ। আর পণ্যের বাজার সৃষ্টিকরণের অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন ও মেলায় অংশগ্রহণ। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করা হচ্ছে।

মেলার ২৫টি পর্ব আয়োজিত হয়েছে শের-ই-বাংলা নগরের উন্মুক্ত মাঠে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাণিজ্যমেলার জন্য নির্মিত স্থায়ী ভেন্যু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ডিআইটিএফ-২০২২ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। এই স্থায়ী মেলা কমপ্লেক্সে তৃতীয়বারের মতো হচ্ছে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০২৪। চীনের অর্থায়নে পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর এখানেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর বসবে।

ইপিবি জানিয়েছে, এবারের বাণিজ্যমেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে। মেলায় এসব দেশের বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হবে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার লক্ষ্য রয়েছে। আগের মতো মেলাটি মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

এবার মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ফার্মগেট থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে উত্তরা বা মতিঝিল থেকে যারা মেলায় আসবেন তারা মেট্রোরেল এসে ফার্মগেট থেকে বাসে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সোজা মেলায় চলে আসতে পারেন সেই সুবিধা রাখা হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা পর্যন্ত বিআরটিসি ও কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসের ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা চলাকালীন এ বাস সার্ভিস চালু থাকবে। এবারের বাণিজ্যমেলার লে-আউট প্ল্যান (সংশোধিত) অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১টি।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে মেলাপ্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া সার্ভিস গেট ও ভিআইপি গেটের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলাপ্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশপথ, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মেলার প্রবেশপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে যে কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ফায়ার ব্রিগেড।

মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সচিবালয়। দর্শনার্থীদের সব প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে একটি তথ্যকেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকছে ডাচ্-বাংলা ও ইসলামী ব্যাংকের একাধিক বুথ। এছাড়া মেলায় থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সার্ভিস বুথ। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। মা ও শিশুদের কথা বিবেচনা করে মেলায় স্থাপন করা হয়েছে দুটি মা ও শিশুকেন্দ্র। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, নিউট্রিশন অ্যান্ড অটিজম সেবা, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার বেঞ্চ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, উন্নত শিল্প সমৃদ্ধ-সোনার বাংলা বিনির্মাণে তার অবদান ও ভাবনা, দেশের উন্নয়ন ইত্যাদিকে প্রক্ষেপণ করে এবারের বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন অধিকতর নান্দনিক, ভাবগাম্ভীর্য ও অর্থপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শের বিভিন্ন দিক ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত ইতিহাস সবার কাছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরারও প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ছাড়াও সম্পর্কিত বই এবং তার জীবন ও কর্মভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Dummy Ad 1

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা পাওয়া কি সহজ হবে?- কর্তৃপক্ষ কী বলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট, ২০২৩

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা পাওয়া কি সহজ হবে?- কর্তৃপক্ষ কী বলছে

বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবার পর এনিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ যেমন দেখা যাচ্ছে, একইসাথে এটা কতটা কার্যকর এবং ঝামেলামুক্ত হবে সেই প্রশ্নও করছেন অনেকে।

নিয়মানুযায়ী কারও বয়স ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হলে অনলাইনে এই স্কিমে নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। সুবিধাভোগীর বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হওয়ার পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

এছাড়া ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীরা ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেয়া সাপেক্ষে এই সুবিধা পেতে পারেন।

তবে কোটি কোটি মানুষের নামে পৃথক হিসাব খোলা, সেটি স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করা হবে কিনা, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কিস্তি দিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই পেনশন পাওয়া যাবে কি না সেই সংশয়ে আছেন অনেক গ্রাহক।

সেইসাথে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পাওয়ার বিষয়ে এখনও নেতিবাচক মনোভাব তো আছেই। বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের টাকা নিয়ে হয়রানির নজির কম নয়।

নতুন পেনশন স্কিমে সেই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হয় কিনা, সেই চিন্তায় আছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা জাহানারা বেগম। এ কারণে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখনো নিজের নামে স্কিমটি চালু করার সাহস করছেন না তিনি।

তিনি বলেন, “এক সময় দেখা যাবে কোটি কোটি লোক স্কিম খুলছে। আমি আজকে স্কিম খুললে মিনিমাম দশ বছর পরে পেনশন পাবো। বাংলাদেশের কোন সরকারি অফিসে গেলে তো ভোগান্তি হয়ই, টাকার পয়সার বিষয় হলে আরও হবে। তখন দেখা যাবে পেনশনের জন্য সরকারি অফিসে ছুটতে ছুটতে, টাকা দিতে দিতে আমার আসল টাকাটাই থাকছে না।”

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোগান্তি যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা তারা করেছেন।

সেবা পাওয়ার দুর্ভোগ কাটবে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, পেনশন পেতে দীর্ঘসূত্রিতা বা হয়রানির কোন সুযোগ নেই, কারণ সব গ্রাহকদের থেকে কিস্তি সংগ্রহ এবং পেনশন দেয়ার সম্পূর্ণ লেনদেন অনলাইনে সম্পন্ন হবে। সেটাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

কিস্তি দাতার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসাবে অথবা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মাসিক পেনশন পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

মি. মোস্তফা বলেন, “পেনশনের আর্থিক লেনদেন সব কিছুই হবে অনলাইনে। গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আমাদের কাছে আছে, তার অ্যাকাউন্টটি পেনশন দেয়ার উপযুক্ত হলে সেই অ্যাকাউন্টে পেনশনের টাকা অটোমেটিক চলে যাবে। কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলা লাগবে না। ”

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গ্রাহক তার ইউনিক পেনশন আইডি দিয়ে প্রবেশ করে বছর শেষে মুনাফাসহ জমা হওয়া টাকার পরিমাণ জানতে পারবেন।

এছাড়া পেনশন তহবিলে সুবিধাভোগীদের যে অর্থ জমা হবে, সেখান থেকে কোন অর্থ সরানো হবে না, এমনকি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় পরিচালন ব্যয় সরকারের আলাদা বরাদ্দ থেকে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এর আগে সরকারি পেনশন পেতে হয়রানি দূর করতে ‘পেনশন সহজীকরণ নীতিমালা-২০২০’ জারি করা হয়েছিল। ওই নীতিমালা অনুযায়ী লেনদেনের সব কাজ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে করতে হয়।

মি. মোস্তফা বলেন, “পেনশন নিতে এক সময় দুর্ভোগ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোন অভিযোগ শুনবেন না। কেননা আমরা এবং এই টাকার লেনদেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হতে হয়। অ্যাকাউন্টসে একটি পেনশনের ফাইল ১০ দিনের বেশি রাখার নিয়ম নেই।”

অর্থ বিভাগের আওতায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নামে আলাদা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন এ সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি পরিচালিত হচ্ছে।

এই স্কিমটি মূলত প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকুরীজীবী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং স্বল্প আয়ের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে চালু করেছে সরকার।

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মীরা এই কর্মসূচির বাইরে থাকবেন। কারণ তাঁরা এরই মধ্যে পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন।

আগ্রহীরা অনলাইনে নিবন্ধন করলেই পেনশন স্কিমে চালু করতে পারবেন, এজন্য কোন সরকারি অফিসে কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। শুধু অনলাইনে নিবন্ধন করে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মাসিক টাকা জমা দিলেই হবে।

পেনশন তহবিলের টাকা বিনিয়োগ হবে কোথায়

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, স্কিমটি চালু হওয়ার তিন দিনের মাথায় অর্থাৎ ১৯শে অগাস্টের মধ্যে এতে যুক্ত হয়েছেন ৪৩৯০ জন। আবেদন জমা পড়েছে ৪০ হাজারের মতো।

তবে সুবিধাভোগীরা কিস্তি বাবদ যে অর্থ দেবে সেটার তহবিল ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, কীভাবে এবং কোথায় পেনশন তহবিল বিনিয়োগ হবে, লভ্যাংশ কীভাবে বণ্টন করা হবে, সেগুলো নিয়ে অস্পষ্টতার মধ্যে থাকার কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে আলাদা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধিমালা তৈরির কথা জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা।

তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে, এই তহবিল সরকারি বন্ড বা ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের কথা রয়েছে। যেসব বিনিয়োগে ঝুঁকি কম সেদিকেই যাবো। যদি ফান্ড আরও বড় হয় তাহলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হতে পারে। এটা সময়ের পরিক্রমায় হবে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরি হচ্ছে, সেই মোতাবেক সব হবে।”

বিধিমালাটি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে তিনি জানান।

তবে এই পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

অতীতে সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অর্থ অব্যবস্থাপনার নজির রয়েছে তাই যারা সুবিধাভোগীর টাকা বিনিয়োগ করবেন, তাদের স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।

মি. মোয়াজ্জেম বলেন, বিনিয়োগগুলো এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে ঝুঁকি কম কিন্তু ভালো রিটার্ন আসবে। এক্ষেত্রে পুঁজি-বাজারে কোন অবস্থাতেই বিনিয়োগ করা যাবে না। তারচেয়ে বন্ডে বিনিয়োগ অনেকটাই নিরাপদ। এতে নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্নের টাকা পাওয়া যাবে, যা দিয়ে মানুষের পেনশন পরিশোধ করা যাবে।

তবে কম ঝুঁকি-সম্পন্ন খাত-গুলোয় রিটার্ন কম হয়। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের বাড়তি যে অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি সরকার করেছে সেটা রাজস্ব থেকে পরিশোধ করতে হতে পারে, যা সরকারের ওপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এক্ষেত্রে একটি ব্যবস্থাপনা দল গঠন করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এই পেনশন স্কিমে শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় না করিয়ে এখানে বেসরকারি খাতের দক্ষ কর্মকর্তাদেরও যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিশেষ করে যারা বিনিয়োগ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন।

“বিনিয়োগে মনোযোগী হতে হবে। যাতে ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া যায়। না হলে যে পরিমাণ রিটার্ন আসার কথা তেমনটা আসবে না। নাহলে সরকারের জন্য এই পেনশন স্কিম আরেকটি বোঝা হয়ে আবির্ভূত হতে পারে। সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে এ পেনশন তহবিল থেকে যা আয় হবে তা দিয়েই মাসিক পেনশন দেওয়া সম্ভব। তার জন্য প্রয়োজন সতর্কতা এবং সুশাসন।” তিনি বলেন।

মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় হবে কীভাবে

উচ্চ মূল্যস্ফীতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে পেনশনে প্রাপ্ত অর্থ পরবর্তীতে জীবনযাত্রার খরচের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে প্রশ্ন আছে সে নিয়েও।

এক্ষেত্রে গ্রহীতাদের প্রাথমিকভাবে এই স্কিমকে কোন লাভজনক বিনিয়োগের খাত না ভেবে বরং সামাজিক সুরক্ষার জায়গা থেকে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন ড. গোলাম মোয়াজ্জেম।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারই জমা টাকার গ্যারান্টর। সরকার নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এখানে অর্থ বুঝে পেতে কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আর্থিক লেনদেনে সরকারের এই নিরাপত্তার বিষয়গুলো প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি জানান, সরকার আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছে পেনশনটি কবে, কি পরিমাণে দেয়া হবে, অর্থাৎ ফিক্সড রেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে গ্রাহকদের কোন ঝুঁকি নেই। এ নিয়ে আরও স্পষ্ট তথ্য প্রচার হওয়া প্রয়োজন।

তার মতে, সরকার মূলত ব্যাংক রেট এবং সঞ্চয়পত্র রেট এই দুটার মাঝামাঝি রেট ধরে এই হিসাবটি করেছেন।

বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যে মূল্যস্ফীতি থাকে অর্থাৎ পাঁচ শতাংশের আশেপাশে। সেক্ষেত্রে আশা করা যায় যে, পেনশন রেট এর চাইতে বেশি অন্তত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

এ ব্যাপারে পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন পেনশনের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের হিসাব গতানুগতিক নিয়ম ধরে নয় বরং একটি সম্ভাব্য সংখ্যা ধরে হবে বলে তিনি জানান।

যেমন বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিমে মাসিক দুই হাজার টাকা কিস্তি দিলে সর্বনিম্ন ১০ কিস্তি দিলে প্রতি মাসে ৩০৬০ টাকা পেনশন পাওয়া যাবে। এখানে পেনশন বাবদ যে হিসাব দেয়া হয়েছে এটি সম্ভাব্য প্রাপ্য অর্থ বলে জানিয়েছেন তিনি। যা কম-বেশি হতে পারে।

“সম্ভাব্য এই দামটি দেখানোর সময় লাভ ও ডিসকাউন্ট দুটো রেট ধরে করা হয়। প্রতি মাসে সম্ভাব্য এই টাকা গ্রাহক পেতে পারে। আজকে ২০০০ টাকা জমা দিয়ে ২০ বছর পর গ্রাহক প্রতিমাসে ঠিক কতো পাবেন সেটা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে না।” তিনি বলেন।

নতুন এই পেনশন স্কিমে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংককে লেনদেনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা যেন নিজ নিজ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তার মতে, সব ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত হলে গ্রাহকদের হিসাব চালাতে যেমন সুবিধা হবে। তেমনি এতে একক কোন ব্যাংক নির্ভরতা এবং একটি ব্যাংকের আধিপত্য তৈরি হবে না। ওই ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ বন্ধ হবে। পেনশনারদের কোন বাধ্যবাধকতায় পড়তে হবে না।


পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা ; লাগাম টানতে মাঠে নামছে ভোক্তা-অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা ; লাগাম টানতে মাঠে নামছে ভোক্তা-অধিকার

JlecBD: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরই বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। হু হু করে বাড়ানো হচ্ছে এই কৃষিপণ্যটির দাম। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভোক্তা-অধিকার জানিয়েছে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালানো হবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। যা গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়। ভারত সরকারের এ ঘোষণার পর বাংলাদেশের বাজারে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ফলে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় তেমন প্রভাব পড়বে না।

ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) জানিয়েছে, নিজেদের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পণ্যটি রপ্তানির ওপর আগামী মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

ভোক্তা-অধিকারের বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়েছে, ৯ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঢাকায় অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করবে। এছাড়া দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করবে।

ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর টনপ্রতি পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও সময়সীমার শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।

এদিকে, ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই দেশের বাজারে হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন এ পেঁয়াজের কেজি ২৪০ টাকা। আর কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেউ কেউ ২২০ টাকাও দাম হাঁকছেন।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, গোদারাঘাট, উলন বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।


সর্বজনীন পেনশন: কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট, ২০২৩

সর্বজনীন পেনশন: কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন?

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হল সর্বজনীন পেনশন স্কিম। সে স্কিমের আওতায় সরকারি চাকুরীজীবী ব্যতীত দেশের সকল নাগরিক পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ কারো বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই এখন অনলাইনে এটিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।

উদ্বোধনের সময় শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যারা সরকারি চাকুরিজীবী তারা তো পেনশন পান, কিন্তু যারা চাকরি করেন না তারা তো পান না, কাজেই এটা সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য না। তার বাইরে যে জনগোষ্ঠী তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। ”

তবে সরকারের নতুন চালু করা এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন, আলোচনা। কারা, কীভাবে এতে যুক্ত হতে পারবেন, সুবিধা কী, কত টাকা দিতে হবে ইত্যাদি।

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বিবিসি বাংলাকে বলেন, পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পর থেকে অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

"প্রচুর লোক ওয়েবসাইটে ঢুকছে। উদ্বোধনের পরপরই একসাথে ১১০০/১২০০ লোক আমাদের প্ল্যাটফর্মে আসেন," বলেন মি. মোস্তফা।

কাদের জন্য এই স্কিম?

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে , দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সুবিধা দিতে এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে, গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল শ্রেণী পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অংশ হতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক।

তবে ব্যতিক্রম আছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা চাইলে পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে।

আবার বয়সের ক্ষেত্রেও বিশেষ বিবেচনা রাখা হয়েছে। যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর।

অর্থাৎ স্কিম অনুযায়ী ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন, তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বছর বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেন তাহলে ৬৫ বয়স বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন।

সরকার মোট ৬টি স্কিমের কথা ঘোষণা করেছে। তবে আপাতত চালু হয়েছে চারটি স্কিম। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।

প্রবাস

এটি শুধু বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে। ব্যক্তি চাইলে এই চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ তিনি যে দেশে আছেন সে দেশের মুদ্রায় দিতে পারবেন। আবার দেশে এসে দেশীয় মুদ্রাতেও দিতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজনে প্রবাস স্কিম পরিবর্তনেরও সুযোগ থাকছে।

প্রগতি

এই স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য। এক্ষেত্রেও তিন ভাগে চাঁদার হার ভাগ করা হয়েছে। কেউ চাইলে মাসে ২ হাজার, ৩ হাজার বা ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে। আবার প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মালিকও প্রগতি স্কিমে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মোট চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করবে।

সুরক্ষা

এই স্কিমটা স্বনির্ভর ব্যক্তির জন্য। অর্থাৎ কেউ কোথাও চাকরি করছেন না কিন্তু নিজে উপার্জন করতে পারেন, তারা সুরক্ষা স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। এর আওতায় পড়েন ফ্রিল্যান্সার, কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন। এই স্কিমে চাঁদার হার চার রকম- মাসে এক হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করে।

সমতা

এই স্কিমে চাঁদার হার একটিই – এক হাজার টাকা। তবে এক্ষেত্রে প্রতিমাসে ব্যক্তি দেবে পাঁচশ টাকা আর বাকি পাঁচশো দেবে সরকার। মূলত দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরত স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এই স্কিম। এক্ষেত্রে দারিদ্রসীমা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। যেমন বর্তমানে বছরে যাদের আয় এখন বছরে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে তারাই কেবল এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন।


স্কিম কীভাবে খুলবেন?

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, "আমরা একটা ফর্মূলা দিয়ে এই মুনাফার ব্যাপারটা ঠিক করেছি। ওখানে উল্লেখ করেছি এটা বাড়তে বা কমতে পারে। তবে আমাদের ফর্মূলা অনুযায়ী এর চেয়ে কমার সম্ভাবনা নেই।"

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের জন্য এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল দিয়ে কয়েকটি ধাপে এতে নিবন্ধন করবেন। এসময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দরকার হবে। কেউ চাইলে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি করতে পারবে।

মাসিক চাঁদা ছাড়াও কেউ চাইলে তিন মাস পরপর বা বছরে একবার পুরো চাঁদা দিয়ে দিতে পারবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে তার পরের এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। এরপর থেকে প্রতি দিনের জন্য ১% বিলম্ব ফি যুক্ত হবে। কেউ টানা ৩ কিস্তি পরিশোধ না করলে তার অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি নিজেকে অসচ্ছল ঘোষণা করে তাহলে ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হবে না।

অনলাইন ও যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। আপাতত শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। কেউ চাইলে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন ও চাঁদা দিতে পারবেন।

পেনশনের সুবিধা

অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হচ্ছে - পেনশন স্কিমে টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত সেটি পাওয়া যাবে তো?

এ প্রসঙ্গে মি. মোস্তফা বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এটা নিয়ে শঙ্কা থাকার কোন কারণ নেই। কারণ সরকার নিজে এটার গ্যারান্টি দিচ্ছে। আর আমরা যে ইউনিক নাম্বার দেব প্রত্যেক পেনশনারকে, তারা কিন্তু ঐ নাম্বার দিয়ে সবসময় চেক করতে পারবেন তার অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে।"

পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে কেউ যদি ৭৫ বছর বয়স পূরণ হবার আগেই মারা যান তাহলে তার নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়া পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন।

আর যদি পেনশনার ১০ বছর চাঁদা দেবার আগেই মারা যান তাহলে তার জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।

কারো যদি পেনশনে জমাকৃত অর্থ কোন এক পর্যায়ে উত্তোলনের দরকার হয় তাহলে সেই সুযোগও থাকছে। তার মোট জমার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অর্থ তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন।

পেনশনের জন্য প্রতিমাসে জমা দেয়া চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হবে এবং সেই অর্থ কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। আর মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ হবে আয়কর মুক্ত।