JlecBD ডেস্ক: সংসদ ও সরকার গঠনের পর এবার সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পালা। এরই মধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৪৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি দুটি আসন পাবে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে আগ্রহী অনেকেই নেতাদের বাসায় ভিড় করছেন। চেষ্টা করছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে।
দলীয় নেতাদের আড্ডায় ও নানা ইঙ্গিতে অনেকের নাম উঠে আসছে, যাদের অনেককেই দেখা যেতে পারে সংসদে। এর মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী, সহযোগী সংগঠনের নেত্রী এবং বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেত্রীদের বিবেচনায় রাখা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এর বাইরেও জোট শরিকদের দু-তিনটি আসন দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে পুরোনোদের সিংহভাগ এবার মনোনয়ন পাবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এবার নারী আসনে জায়গা পেতে পারেন- আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার (চাঁপা), কার্যনির্বাহী সদস্য পারভিন জামান কল্পনা ও মারুফা আক্তার পপি। এর বাইরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আখতার জাহান, মেরিনা জাহান, সফুরা বেগম, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াও আসতে পারেন।
পেশাগত অঙ্গনে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম নারী সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন থাকতে পারেন এবারের সংসদে। আইন অঙ্গনে সাফল্যের জন্য সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানাকেও রাখার হতে পারে। গত সংসদের সদস্য আরমা দত্ত ও খালেদ মোশাররফের কন্যা মাহজাবীন খালেদ এবারও থাকতে পারেন।
যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল, সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনও আছেন আলোচনায়।
ধানমন্ডি থানা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ মিলি, নৌকা নিয়ে হেরে যাওয়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী সানজিদা খানমের নামও আছে আলোচনায়। এর বাইরে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও নাগরিকত্ব জটিলতায় নির্বাচন না করতে পারা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও আছেন দৌড়ে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বরাবরের মতো দেশ, রাজনীতি ও আওয়ামী লীগে অসামান্য অবদান রাখা পরিবারের সন্তান এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রথিতযশা নারীদের আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।- জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন
বরাবরের মতো এবারও আঞ্চলিক নেতা বা জেলা নেতাদের মধ্যে অনেকেই আসবেন সংরক্ষিত আসনে। পাশাপাশি পেশাগত অঙ্গনে সফল, প্রয়াত বাবা-মায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক বা পেশাগত জীবনের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের সন্তানদের কয়েকজনও আসবেন এই সংসদের সংরক্ষিত আসনে।
জোট নেতাদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার স্ত্রী, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক আসতে পারেন এই সংসদে। এছাড়া জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পরিবারের কাউকে আনা হতে পারে।
এ নিয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘নেত্রী যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করবেন। আমরা তার কর্মী, তার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিই।’
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের নানা প্ল্যাটফর্মে দলীয় কার্যক্রম করে আসছি। বিশেষ করে, আইনজীবীদের নিয়ে আমার উল্লেখযোগ্য কাজ আছে। এরই মধ্যে করোনার সময়ে করোনা মোকাবিলা ফান্ড গঠন করে আইনজীবীদের পাশে ছিলাম। তাদের সহায়তা করেছি। আমার এলাকা চাঁদপুরেও করোনার সময় আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি সংসদ সদস্য হতে পারি, আইন প্রণয়নে সুন্দর ভূমিকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ভিশন- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করবো।’
নারী আসনে মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বরাবরের মতো দেশ, রাজনীতি ও আওয়ামী লীগে অসামান্য অবদান রাখা পরিবারের সন্তান এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রথিতযশা নারীদের আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহিলা সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন নেওয়ার বা চাওয়ার যে হিড়িক, সেই তুলনায় আমাদের দেওয়ার সুযোগ খুব কম। আমরা আমাদের পরীক্ষিত, ত্যাগীদের গুরুত্ব দেবো। যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যারা আমাদের দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী, তাদের ব্যাপারটা আমরা অগ্রাধিকার দেবো।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২২৩, ১৪ দলীয় শরিক জাসদ একটি ও ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, স্বতন্ত্র ৬২ আসন পেয়েছে। কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি দুটি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়।
এরই মধ্যে নারী আসন বণ্টনের সুবিধার্থে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্রদের কাছে ৩০ জানুয়ারি মধ্যে দলে যোগদান বা জোট করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৩১ জানুয়ারি জোটবদ্ধভাবে ৪৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানিয়ে সবার সই নিয়ে ইসিতে চিঠি জমা দেয় আওয়ামী লীগ।