দেশে চলমান ‘অস্বস্তির’ রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি বলছি রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে। রাজনৈতিক সমাধানে না এলে পরে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা আমাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার জন্য বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটিকে অন্যতম প্রধান দায়ী মনে করেন। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান আর রাজনৈতিক ঐকমত্যকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত-
প্রশ্ন: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: অর্থনীতি তো চাপের মধ্যে আছে এটা মোটামুটি পরিষ্কার। বিষয়টা হলো যে কোভিডের অতিমারির সময়ে অর্থনীতির ওপরে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল এবং তৎপরবর্তী সময়ে কিছুটা উন্নয়নের দিকে ঊর্ধ্বগতির দিকে অর্থনীতি যাওয়া শুরু করেছিল যদিও সেগুলোর উন্নতিটা বিভিন্ন কারণে সব জায়গাতে সমানভাবে না। তো সেটা কিন্তু ধরে রাখা যায়নি। এবং ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়েছে তাতে দেখা যায় যে, একদিকে যে আর্থিক খাত সেটাতে আমার রাজস্ব আদায় এবং একইসঙ্গে সরকারি ব্যয় দুই জায়গায়ই কমের দিকে রয়েছে। উপরন্তু সাম্প্রতিককালে যেহেতু আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তার ফলে অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক আদায় কম হওয়াতে রাজস্ব আদায়ের ওপরে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
পক্ষান্তরে যেহেতু ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেছে এবং বিনিয়োগ কমছে কিন্তু অপরদিকে প্রত্যক্ষ কর আহরণের একটা বড় চেষ্টা রয়েছে। সেটাও একটা আগামী দিনের বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ওপরে নতুন চাপ সৃষ্টি করছে। যেটা দেখার বিষয় সরকার যে ব্যয়টা করছে এখন সেই ব্যয়টাতে দেখা যাচ্ছে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দ এবং ব্যয় ব্যবহারটা বেশি। সেটা দেখতে গেলে আর্থিক খাতের যে কাঠামোগত সমস্যা এখন মৌসুমী সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেশ সমস্যায় রেখেছে। আর তার চেয়েও বড় সমস্যা যেটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিগত দশকে শক্তির জায়গা ছিল বৈদেশিক খাতে লেনদেনের ভারসাম্য সেই জায়গাতে তো আমরা লক্ষ্য করছি কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাচ্ছে এবং রপ্তানি যেটুকু বাড়ছে সেটুকু দিয়ে আমরা সম্পূর্ণ আমদানি করতে পারছি না, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে আবার ব্যক্তি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং যেটা দেখা যাচ্ছে যে রেমিট্যান্সটা যেভাবে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম সেভাবে নেই। যার ফলে যেই ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের প্রত্যাশা করেছিলাম সেভাবে হচ্ছে না।
ফলে যেটা হচ্ছে সরকারের আরও বেশি করে বৈদেশিক ঋণ নেয়ার জন্য সরকারকে দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বাজেট সাপোর্ট জোগাড় করার জন্য বিশ্ব ব্যাংক এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অন্যদের কাছ থেকে। এবং আরেকটা যেটা লক্ষ্য করছি যে সরকার ওই যে আর্থিক খাতে যে তার ঘাটতি সেটা পূরণ করার জন্য আবার ব্যাংকিং খাত থেকে বড় ধরনের ঋণ নিচ্ছে যেটা আবার ব্যক্তি খাতে প্রভাব ফেলছে বলে আমরা দেখছি। যেহেতু সরকারের বড় দুটো খাত আর্থিক খাত এবং বৈদেশিক লেনদেন খাত। দুই ক্ষেত্রেই যে ভঙ্গুরতা আমরা ২০২২-২৩ এ দেখেছিলাম সেটা জুলাই আগস্ট মাসে এসে খুব বেশি কমেনি। আর এর সঙ্গে যে অর্থনীতির বড় সমস্যাটা যুক্ত হয়েছে সেটা হলো মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রত্যক্ষভাবে বেড়ে গেছে। যেটা লক্ষণীয় বিষয় সেটা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে কিন্তু পণ্যমূল্য আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। সেটার সুযোগ বাংলাদেশ নিতে পারছে না। অর্থাৎ বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাদের বহু ঘাটতি রয়ে গেছে। তার একটা প্রধান ঘাটতি তো অবশ্যই যে তথ্য-উপাত্ত ঠিকমতো নেই এবং সেই তথ্য-উপাত্তের প্রতি যথেষ্ট নজর দিয়ে নীতি নির্ধারকরা দৈনন্দিন নীতিগুলোর যে সংস্কার দরকার সেগুলো সেভাবে করছে না। সেহেতু আপনি দেখবেন যে যদিও আমরা আইএমএফের কাছে গেছি বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু আমরা ঠিকমতো নিষ্ঠার সঙ্গে পরিপালন করতে পারছি না। যেমন আপনার সুদের হার যেভাবে শিথিল করার কথা ছিল এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে সঞ্চয়ের হার বাড়ে সেটার জন্য চেষ্টা করার কথা ছিল সেটা করা হয়নি এবং একইভাবে আপনার টাকার বিনিময় হারকে যে সামঞ্জস্য বিধান করার কথা ছিল সেটা করেনি।
প্রশ্ন: বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে গত এক বছরের মূল্যস্ফীতি কমে আসলেও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। আপনার কাছে এর কারণ কী বলে মনে হচ্ছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আপনাকে তো বললাম যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পণ্য মূল্য একটা বড় বিষয়। তো পণ্য মূল্য যদি আমদানিকৃত পণ্য মূল্য হয় তাহলে সেটা যদি টাকার মান কমতে থাকে তাহলে সেটাতে আমরা আসবো। কিন্তু তারপরেও যে সমস্ত জিনিসের দাম কমেছে সে সমস্ত জিনিসের দামের সুফলটা আমাদের ভোক্তাদের কাছে দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বললাম যে বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা রয়ে গেছে। এবং এখানে যে সমস্যা রয়ে গেছে এটাতো প্রকাশ পাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে কথাটা বলছে, কৃষি মন্ত্রণালয় সে কথার সঙ্গে একমত হচ্ছে না বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তার সঙ্গে একমত হচ্ছে না সময়মতো আমদানির সিদ্ধান্ত হচ্ছে না সময়মতো প্রণোদনার প্রয়োজনটাকে মেটানো যাচ্ছে না। তো এখানে একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের শৃঙ্খলার অভাব আমরা লক্ষ্য করছি। এবং আরেকটা যেটা বড় বিষয় সেটা হলো যে মূল্যস্ফীতি সবই তো আর আমদানিকৃত পণ্য না, খাদ্য উৎপাদনের বড় অংশই দেশের ভেতর এখন হয়। সেহেতু যেগুলো দেশে উৎপাদিত হচ্ছে সেই জিনিসের দাম কেন বাড়ছে। এর ব্যাখ্যা তো আমরা নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে পাচ্ছি না। তো আমি আপনাকে সাধারণভাবে বলবো অর্থনৈতিক কাঠামোগত যে সমস্যাগুলো ছিল বৈশ্বিক পরিস্থিতি এটাকে যে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো দিয়েছে এইগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য যে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বা নীতি-নেতৃত্ব বা সংস্কারের উদ্যোগ সেগুলোর ক্ষেত্রে দুঃখজনক ভাবে আইএমএফের কাছে যাওয়ার পরেও আমরা বড় ধরনের ঘাটতির মধ্যে রয়ে গেছি। অভাবের ভেতরে আছি।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কা কিছুদিন আগে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল এখন আবার তাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে এর পেছনে ম্যাজিক কী? শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও আমরা কেন পারছি না।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: শ্রীলঙ্কার উদাহরণ থেকে দুটো শিক্ষা নেয়ার ব্যাপার আছে একটা হলো যদি আপনার অর্থনৈতিক কাঠামোতে মৌলিক শক্তি থাকে বিশেষ করে মানবসম্পদ এবং যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতার ভেতরে যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আপনার কর আদায় করার প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিনিয়োগকে পরিচালনা করার ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যদি আপনার মৌলিক শক্তি থাকে তাহলে আপনি যখন সমস্যা উত্তরণে যান তখন এই শক্তিগুলো অনেক কাজে দেয়। দ্বিতীয় যে শিক্ষাটা এসেছে সেটা হলো, যে এই সংকটকে মোকাবিলা করার জন্য যতই পীড়াদায়ক হোক না কেন সেই সমস্ত সংস্কারের পদক্ষেপ তারা নিয়েছে। যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি তারা বৈদেশিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে বা ঋণদাতাদের কাছে দিয়েছিল সেগুলো তারা কার্যকর ভাবে করেছে তার সবচেয়ে বড় সুফল হলো যে, তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এখন বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কাতে মূল্যস্ফীতি কম। এবং তার চেয়ে বড় যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হলো এর ভেতরে শ্রীলঙ্কা আপনার বৈদেশিক ঋণ যেটা বাংলাদেশ থেকে নিয়েছিল সেটা তারা শোধ করার উদ্যোগ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আমরা দুই কিস্তি পেয়েছি। তো এর চেয়ে বড় শিক্ষা আর কি হতে পারে। যে সংকট যখন আসে সংকটকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার চেয়ে সংকট মোকাবিলা করার জন্য যে ধরনের পরীক্ষিত পথগুলো আছে। সেই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সেই পরীক্ষিত পথগুলোতে যাওয়াই হলো বড় বিষয়। সেখানে যেন আমাদের দলীয় রাজনীতির বা জাতীয় রাজনীতির প্রয়োজনগুলো আমার অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে যেন বিস্তৃত করে না দেয়।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কায় আগের সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না কিন্তু বর্তমান সরকার কীভাবে পারলো?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: নতুন সরকার যেটা এসেছে সেই নতুন সরকার তো জাতীয় ঐকমত্যের সরকার। সেহেতু এখানে যে সংস্কার যে পদক্ষেপগুলো হয়েছে সেখানে আপনার সব ধরনের দলমত নির্বিশেষে আলোচনার ভিত্তিতেই তারা একটা জাতীয় উত্তোলন পরিকল্পনা করেছে। এবং সেই জাতীয় উত্তোলন পরিকল্পনাকে তারা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছে। সেহেতু শ্রীলঙ্কা থেকে তৃতীয় শিক্ষা যদি আপনি বলেন তাহলে এই ধরনের সংকট মোকাবিলা উত্তরণের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্যের অনেক প্রয়োজন পড়ে। তখন সবাই মিলে যদি সমর্থন না দেয় এবং শুধু রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাগরিক সমাজ যদি একসঙ্গে থাকে তাহলে এটা কার্যকর করা সম্ভব।
প্রশ্ন: আপনি বেশকিছু জায়গায় বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ না হলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়তো এর পেছনের কারণ কী?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এর কারণ হলো যে ধরুন এটা হলো একটা অংশ যেকোনো পণ্যমূল্যের বৃদ্ধি হয়েছে যুদ্ধের কারণে সরবরাহ থেমে গেছে ইত্যাদি। তো এটা একটা বড় জায়গা হলো আপনার খাদ্য প্রবাহ। ইউক্রেন দিয়ে আপনি গম আনতে পারছেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। তো বাংলাদেশ তো খাদ্যের ক্ষেত্রে তো ৯৯% অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে। তাহলে চালের দাম কেন বাড়বে? অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যেগুলো আছে এগুলো কেন বাড়বে? এই দামগুলো কেন বাজারে বাড়ছে এবং আপনি যে দামে আনছেন সেই ক্ষেত্রে আপনার যে সমস্ত সংকটগুলো আছে সেখানে আপনি শুল্ক সমন্বয় করে আপনি তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না কেন? তার বাইরে আপনি যদি দেখেন যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কথা আমি বললাম, বাংলাদেশে তো প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সংকটের জায়গা হলো আমার ব্যাংকিং খাত। তো ব্যাংকিং খাতে অনাদায় ঋণ কি বেড়েছে ইউক্রেনের কারণে? শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায় না কেন? শেয়ারবাজারে কি ইউক্রেন থেকে পুঁজি আসতো?
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমার প্রথম পরামর্শ হলো যে এই মুহূর্তে বিরাজমান যে রাজনৈতিক অস্বস্তি রয়েছে আমি সংকট বললাম না অস্বস্তি বললাম সেই অস্বস্তি যেন অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি না করে। এমন ধরনের পদক্ষেপ যেন সরকার এবং বিরোধী পক্ষ থেকে না আসে যাতে বাংলাদেশের জনজীবন অসুবিধার ভেতর পড়ে, খেটে খাওয়া মানুষের আয়-রুজি নষ্ট হয় এবং একটা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ভেতরে দেশটা চলে না যায়। সে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় যাওয়ার জন্য এর চেয়ে আর খারাপ সময় নেই কিন্তু। আর দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে যে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে বা রাজনৈতিক পক্ষ বলছি তারা সকলেই অতীতমুখী একটা আলোচনা করে যেই জিনিসটা আমি এখনো দেখি না সেটা হলো যদি নির্বাচনের পরে উনারা কীভাবে দেশ পরিচালনা করবেন। এই ব্যাপারে মুখে মুখে বিভিন্ন বা কাগজপত্রে বিভিন্ন কথা থাকলেও উনারা এটা প্রচার এবং কথার ভেতরে সেভাবে আনেন না। সরকারি দল যেটুকুও বা আনে কারণ হলো তারা ক্ষমতায় আছে প্রক্রিয়ার ভেতর আছে। বিরোধী দল তারা অনেক দফা দিলেও সেগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ হিসেবে আসে না। সেটা হলো যে তারা ভিন্নভাবে কী করবেন? তারা এই ব্যাংকিং সমস্যার সমাধান কীভাবে করবেন? পুঁজিবাজারকে কীভাবে চাঙ্গা করবেন? মূল্যস্ফীতিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? এলডিসি থেকে বের হলে পরে আমরা কি কি সমস্যায় পড়বো বা মোকাবিলা ওনারা কীভাবে করবে? কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কী করবেন? গরিব মানুষের জন্য যে সুরক্ষা আছে সেই সুরক্ষা ওনারা কীভাবে সম্প্রসারণ করবেন যেখানে আয়ের সংকট আছে এই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের সামনে নিয়ে আসা উচিত।
নাগরিকদের পক্ষ থেকে দেখেন বাংলাদেশে প্রায় এখন এক তৃতীয়াংশের উপরে হলো যুবসমাজ। সেই যুবসমাজ অনেক বেশি ইতিহাস সচেতন। তাদের অনেক বেশি প্রত্যাশা হলো দেশ আগামী দিনে কোথায় থাকবে? এই কথাটা আমার রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিতে এখন আগামী দিন কোথায় থাকবে এটার ভেতরে শুধুমাত্র রক্তপাত এবং ভয়-ভীতির আলোচনা চলছে। দেশকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনাকে আমরা সেইভাবে গুরুত্ব পেতে দেখি না।
আমি বলছি রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে। রাজনৈতিক সমাধানে না আসলে পরে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা আমাদের ওপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এটা দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের যদি আপনি ইতিহাস দেখেন ৫২ বছরে বাংলাদেশের নাগরিকরা খেটে খাওয়া মানুষ যেভাবে অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে আমরা অনেক সময় তাকে পরিপূরক সন্তোষজনক রাজনৈতিক পরিবেশ দিতে পারিনি। আমাদের কথা হলো আগামী দিনে এমন রাজনৈতিক পরিবেশ দিতে হবে যাতে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা মানুষগুলো খেটে খাওয়া মানুষগুলো আরও বেশি সুষম উন্নয়নের অংশীদার হতে পারে।