দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চারবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এবার চোখ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এই কমিটির সভাপতি অনেকটা ছায়ামন্ত্রীর মতোই। নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি, তদারকি ও কাজে গতিশীলতা আনতে সংসদীয় কমিটি করার রেওয়াজ আছে সংসদে। আট থেকে ১৫ সংসদ সদস্যের ওই কমিটিতে একজন থাকেন সভাপতি। আর স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাধারণত হন সাবেক মন্ত্রী বা জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য।
নির্বাচনের পর নতুন সরকার ৩৯টি মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের কাছে রেখেছেন তিন মন্ত্রণালয়। বাকি ২৫টিতে মন্ত্রী ও ১১টিতে প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে মূলত চলবে মন্ত্রণালয়। তবে রেওয়াজ অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাজের তদারকি করবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদের দফা (১)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদ (ক) সরকারি হিসাব কমিটি, (খ) বিশেষ অধিকার কমিটি এবং (গ) সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে নির্দিষ্ট অন্যান্য স্থায়ী কমিটি গঠন করবে।
নির্বাচনের পর নতুন সরকার ৩৯টি মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের কাছে রেখেছেন তিন মন্ত্রণালয়। বাকি ২৫টিতে মন্ত্রী ও ১১টিতে প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়েছে।
দফা (২)-এ সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা ও কার্যাবলির বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিটি সংবিধান ও অন্য কোনো আইন সাপেক্ষে (ক) খসড়া বিল ও অন্যান্য আইনগত প্রস্তাব পরীক্ষা করতে পারবে; (খ) আইনের বলবৎকরণ পর্যালোচনা এবং অনুরূপ বলবৎকরণের জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণের প্রস্তাব করতে পারবে; (গ) জনগুরুত্বসম্পন্ন বলে সংসদ কোনো বিষয় সম্পর্কে কমিটিকে অবহিত করলে সে বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ বা প্রশাসন বিষয়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারবে।
কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি সংগ্রহ এবং প্রশ্নাদির মৌখিক বা লিখিত উত্তর লাভের ব্যবস্থা করতে পারবে। এবং (ঘ) সংসদ কর্তৃক অর্পিত অন্য যে কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবে। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে সব কমিটির কাজের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদে সংসদীয় কমিটি আছে ৫০টি। এরমধ্যে ৩৯টি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- কার্যউপদেষ্টা কমিটি, কার্যপ্রণালি বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পিটিশন কমিটি, লাইব্রেরি কমিটি, সংসদ কমিটি, বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটি ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে কারা আসছেন, এ নিয়েও এখন আলোচনা হচ্ছে। অতীত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই কমিটিগুলো করেন সংসদ নেতা নিজেই। চিফ হুইপ বা স্পিকার সংসদ নেতার অনুমোদনক্রমে এগুলো সংসদে উপস্থাপন করেন। পরে তা গ্রহণ করে সংসদ। স্বভাবতই সাবেক মন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ অথবা জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়।
কারা হচ্ছেন ছায়ামন্ত্রী?
এবারে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হতে পারেন সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার অথবা জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হতে পারেন সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন মোহাম্মদ সাদিক বা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বা জাহিদ আহসান রাসেল। খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আসতে পারেন। সাবেক মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আসতে পারেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে। ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
অতীত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই কমিটিগুলো করেন সংসদ নেতা নিজেই। চিফ হুইপ বা স্পিকার সংসদ নেতার অনুমোদনক্রমে এগুলো সংসদে উপস্থাপন করেন। পরে তা গ্রহণ করে সংসদ। স্বভাবতই সাবেক মন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ অথবা জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে আসতে পারেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বা প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু আসতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে বর্তমান সভাপতি আ ফ ম রুহুল হকই থাকছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে ফের আসতে পারেন বর্তমান সভাপতি রওশান আরা মান্নান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বা রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু আসতে পারেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে।